এক সময়ে দেশের বৃহত্তম সবুজ সম্পদের সমৃদ্ধশালী উখিয়া বনসম্পদ এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। প্লট আকারে দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকাশ্য লেনদেন হচ্ছে এখানকার সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনভূমির জায়গা জমি। বেপরোয়া সরকারি বনভূমির সম্পত্তি সরকারের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় আগামী ৫ বছরে এখানে বনায়ন সৃজনে কোন পরিবেশ থাকবেনা বলে আশংখা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর ছত্রছায়ায় উখিয়ার ঘাট বালুখালী বনবিটের অফিস ভিটার পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তন পূর্বক অবৈধ ভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন বহুতল ভবন নির্মাণের ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও বনবিট কর্মকর্তা মোবারক আলীর রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী ও সচেতন মহলরা ।
উখিয়া বনরেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমি নিয়ে উখিয়ার ঘাট বালুখালী বনবিটের অবস্থান। মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি এ বনবিটের জায়গা জমি বৃদ্ধমান থাকার কারণে বনবিভাগ এ বনবিট অফিসকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আসলেও দায়িত্বরত রেঞ্জ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বনবিট কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা সহ অনিয়ম দূর্ণীতির কারণে ঐ বনবিটের বেশির ভাগ জমি পাহাড়, টিলা বেদখল হয়ে গেছে বলে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীর সভাপতি বদিউর রহমান সহ এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
গত শূক্রবার উক্ত বনবিট অফিস ঘুরে দেখা যায়, সু-উচ্চ পাহাড়ের উপর নির্মিত এক তলা ভবনের বন বিট অফিসের সম্মুখ স্থলে শতাধিক গাছপালা কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও বিট অফিসের পেছনের অংশে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। বিট অফিস লাগোয়া পাহাড় কেটে লাখ লাখ টাকার নির্মাণ সামগ্রী মওজুদ করে ২০/২৫ জন নির্মাণ শ্রমিক বহুতল ভবন নির্মাণে ব্যস্ত রয়েছে। সাংবাদিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করে শ্রমিকরা তাৎক্ষনিক ভাবে অদৃশ্য হয়ে গেলেও স্থানীয় ৮/১০ জন দুর্বত্ত বেপরোয়া আচরণ করে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাঁধা প্রদান করার চেষ্টা করে। এ সময় বনবিট কর্মকর্তা মোবারক আলীর উপস্থিতিতে অবৈধ দখলদার মৃত আব্দুল করিমের ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ী মোঃ খলিল জানায়, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বসত বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। অবশ্য বনবিট কর্মকর্তা মোবারক আলী ম্যানেজ করার বিষয়টি অস্বীকার করলে ঐ জবরদখলকারী ভূমি দস্যুকে সতর্কতা মূলক কোন বাক্য ওক্তি করেনি। উপরোক্ত বনবিট কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, রেঞ্জ কর্মকর্তা শূক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
বনবিট অফিসের পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম পাহাড় কাটার বিষয়টি বারবার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলেন, নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন নির্মাণ সামগ্রী জব্দ করা হয়নি এবং জবর দখলকারীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি জানতে চাওয়া হলে রেঞ্জ কর্মকর্তা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে স্থানীয় গ্রামের আনর আলী, বাদশা মিয়া, শামশুল আলম সহ বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ইয়াবা বিক্রির টাকায় স্থানীয় বন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা ম্যানেজ হয়েছে। তা না হলে বিট অফিসের অফিস ভিটার পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। উখিয়ার সহকারী বনসংরক্ষক মোঃ সারওয়ার আলম জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। কক্সবাজার দক্ষিন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির জানান, ঐ স্থানে কোন প্রকার ইটের গাঁথুনি দেওয়া হলে রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বনবিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ভাবে শাস্তিলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বন বিট কর্মকর্তা জানান, সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করায় ঐ ভূমিদস্যু মোঃ খলিল সহ স্থানীয় আরো ৪/৫ জন ভূমিদস্যু গতকাল শনিবার সকালে বেশ কিছু চিংড়ি মাছ সহ অন্যান্য উপঢোকন নিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছে। ওখানে তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে তা জানা নেই।
পাঠকের মতামত: